তিন বছর পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেট সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ দল। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে রিশাদ হাসান ও মুশফিকুর রহিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারী শ্রীলঙ্কাকে।

শ্রীলঙ্কার দেওয়া মাঝারি রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের হয়ে ইনিংস শুরু করতে আসেন এনামুল হক বিজয় ও তানজিদ হাসান তামিম। লক্ষ্য তাড়ায় বিজয় দেখে শুনে ধীরে খেলতে থাকলেও আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকেন তামিম। এই দুই জুটিতে ৫০ করেন। তবে পাওয়ার প্লের আগের ওভারে টাইগারদের এই জুটি ভাঙেন লঙ্কান বোলার লাহিরু কুমারা। লঙ্কান পেসারকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ফার্নান্দোর তালুবন্দী হন বিজয়। সাজঘরে যাবার আগে ২২ বলে ১২ রান করেন তিনি।

বিজয়ের বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্ত। উইকেটে থিতু হওয়ার আগেই সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে নিজের নামের পাশে ১ রান যোগ করেন তিনি। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে খানিকটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

এরপর তৃতীয় উইকেটে এসে তামিমের সঙ্গে জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয়। দুই জনের জুটিতে আসে ৪৯ রান। এরপর আবার বাংলাদেশের জুটি ভাঙেন লঙ্কান পেসার কুমার। ইনিংসের ২২তম ওভারে তার শর্ট লেংথের বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে মাদুশানের তালুবন্দী হন হৃদয়। সাজঘরে যাবার আগে ২২ রান করেন তাওহীদ।

হৃদয়ের আউটের পর বাইশ গজের উইকেটে আসেন মাহামুদউল্লাহ রিয়াদ। চতুর্থ উইকেটে এসে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি এই অভিঙ ব্যাটার। দলীয় ১১৩ রানে কুমারার চতুর্থ শিকারে পরিনিত হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে ১ রান করেন রিয়াদ। একপ্রান্তে সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তামিম।

কিন্তু শতকের দাঁড় প্রান্তে ছুটতে থাকা এই বাঁহাতি ব্যাটার দলীয় ১৩০ রানে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। প্যাভিলিয়নে যাবার আগে ৮১ বলে ৮৪ রান করেছেন তিনি। এরপর ষষ্ট উইকেটে মুশফিক-মিরাজের ব্যাটে চাপ সামলিয়ে রানের চাকা সচল রেখে এগোতে থাকে।

তবে দলীয় ১৭৮ রান আউট হলে ভাঙে ৪৮ রানের এই জুটি। সাজঘরে যাবার আগে ২৫ রান করেন তিনি। এরপর টাইগারদের জয়ের মঞ্চটা তৈরি করেন তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ইনিংসের ৪০তম ওভারে লঙ্কান স্পিনার হাসারাঙ্গার ওভারে ২৪ রান তুলে জয়ের ভিত তৈরি করে ফেলেন রিশাদ।

তার অপারিজিত ৪৮ ও মুশিফিকের ৩৭ রানের ইনিংসে ৫৮ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ চার উইকেট নেন লাহিরু কুমারা।

এর আগে ম্যাচের শুরুতে বল হাতে দারুণ করেছেন বাংলাদেশের পেসাররা। বিশেষ করে তাসকিন আহমেদ বেশ সুইং পেয়েছেন। এই পেসারের সুইংয়ে চোখে রীতিমতো সর্ষে ফুল দেখেছেন পাথুম নিশাঙ্কা! ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি ফুললেংথে করেছিলেন তাসকিন। সেখানে ডিফেন্ড করতে গিয়ে ব্যাটে লাগাতে পারেননি নিশাঙ্কা, বল সরাসরি তার প্যাডে লেগেছে। তাতে লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবোরো। যদিও বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় মিস করে যেত লেগ স্টাম্প।

নিজের করা পরের ওভারেও উইকেট পেয়েছেন তাসকিন। এবার বাইরের দিকে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়েছেন আভিষ্কা ফার্নান্দো। ক্যাচ জমা পড়েছে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৪ রানে এই ওপেনারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেন তাসকিন।

১৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন কুশল মেন্ডিস। তবে সামারাবিক্রমা ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এই ইনফর্ম ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। সিরিজে প্রথমবার ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার।

মুস্তাফিজের মতোই প্রথম দুই ওয়ানডেতে একাদশের বাইরে ছিলেন রিশাদ হোসেন। আজ সুযোগ পেয়ে বল হাতে দুর্দান্ত শুরু করেন এই লেগ স্পিনার। নিজের প্রথম বলেই ফেরান উইকেটে সেট হওয়া কুশল মেন্ডিসকে।

ইনিংসের ১৮তম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন রিশাদ। তার করা প্রথম বলটি অফ স্টাম্পের সামান্য বাইরে পড়ে টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় খোঁচা দিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল চলে যায় মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ২৯ রান করা মেন্ডিসকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে নিজের অভিষেক উইকেট পেলেন রিশাদ। এর আগে আরও দুই ওয়ানডে খেললেও ছিলেন উইকেট শূন্য।

টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে আরও একবার দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করার চেষ্টা করেছেন চারিথ আসালঙ্কা। ইনফর্ম এই ব্যাটার দেখে-শুনে খেলে উইকেটে থিতু হয়েছিলেন। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২৫তম ওভার মুস্তাফিজের ব্যাক অব লেংথের বলে কাট করতে গিয়ে আউট সাইড এডজে মুশফিকের গ্লাভসে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে ৪৬ বলে ৩৭ রান করেছেন তিনি।

সাতে নেমে দলের বিপদের মুহূর্তে ব্যর্থ দুনিথ ভেল্লালেগে। এই বোলিং অলরাউন্ডার ১ রানে সাজঘরে ফিরে দলের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন। ৩১তম ওভারে মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ভেল্লালেগে।

সুবিধা করতে পারলেন না ভানিন্দু হাসারাঙ্গাও। উইকেটে এসেই পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের গতি পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। কিন্তু এক ছক্কায়ই শেষ হলো তার পাল্টা জবাব। ৩৫তম ওভারের প্রথম বলে ব্যাকফুটে জায়গা করে নিয়ে অফের দিকে খেলতে চেয়েছিলেন হাসারাঙ্গা, কিন্তু খানিকটা নিচু হওয়া বলে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৮ বলে ১১ রান।

১৫৪ রানে ৭ ব্যাটারকে হারিয়ে দ্রুত অলআউটের শঙ্কায় পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে অষ্টম উইকেট জুটিতে মাহিশ থিকশানাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন লিয়ানাগে। থিকশানা ১৫ রান করে সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ৬০ রানের জুটি। এটাই ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি। থিকশানা ফিরলেও আরেক প্রান্ত আগলে রেখে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন লিয়ানাগে। ১০১ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। এটি তার অভিষেক সেঞ্চুরিও। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১০২ বলে ১০১ রান করে।